কলম ছুঁড়ে ফেলে স্টেনগান তুলেছিলেন নিজামউদ্দীন ভূঁইয়া


প্রিয়তমাসু
আমার সময়ের রাজ্যে
তোমার সংগীত ঐকতান তোলে
মিছিলের উচ্চকিত ধ্বনির মতো
আমার নিভৃত জাগ্রত করে
আমি শুনি, কান পেতে শুনি।

- ১৯৬৯ সালের নিজ সম্পাদিত 'কালচক্র' পত্রিকায় লিখেছিলেন আমাদের নিজাম। পুরো নাম নিজামউদ্দীন ভূঁইয়া। সুপুরুষ, অন্তর্মুখী কিন্তু বড্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন আমাদের নিজাম। স্বপ্নালু চোখে লিখে যেতেন প্রেমের কবিতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখার পাট-চুকিয়ে হোটেল শেরাটনে কর্মরত ছিলেন (তৎকালীন ইন্টারকন্টিনেন্টাল) উচ্চপদে। এরই মাঝে এলো ২৫ শে মার্চের সেই ভয়াল রাত্রি। ইকবাল হলে আটকা পড়েছিলেন সাধারণ ছাত্রদের সাথে। স্বচক্ষে দেখলেন সেই কালরাত্রির বিভীষিকা। বুকে এবার প্রতিশোধের আগুন। নিজ গ্রামে এসে সংঘটিত করলেন তরুণদের। শুরু হলো যাত্রা। বন্ধুর এক গন্তব্যে যাত্রা। অনিশ্চিত আগামী। সম্মুখে মৃত্যুর শীতল হাতছানি , তবু বুকে সংকল্প হানাদার বদের।

অত্যন্ত সফলতার সাথে শেষ হয় ভারতের সিমানার দুরূহ ট্রেনিং। একাধিক অপারেশনের সফলতার পর ৪৮৬ জনের বিশাল এক গণবাহিনীর উপাধিনায়কের দায়িত্ব লাভ করেন নিজাম। যুদ্ধ; এ যেন এক রহস্যময় জাদুর কাঠি । নইলে বই পোকা সেই লাজুক ছেলেটি এভাবে বদলায় কীভাবে? এখন সে কমান্ডার নিজাম, নজরুলের বিদ্রোহীর মতই রুক্ষ একই সাথে ফর্‌রুখের সাত সাগরের মাঝির মতই শান্ত। কমান্ডার নিজামের অতর্কিত আক্রমণে সিলেট অঞ্চলের পাকবাহিনী তটস্থ। একে একে ধ্বংস হচ্ছে পুল কালভার্ট, সিলেট টেলিফোন এক্সচেঞ্জ টাওয়ারটিও উড়ে যায় তার বাহিনীর আক্রমণে। সড়ক বা টেলিফোন,সকল ধরণের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানীদের।

এমনই এক অপারেশনে ৪ই সেপ্টেম্বর হুট করে মরে গেল সেই ছেলেটি। অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে অগ্রভাগে নেতৃত্বে ছিলেন, তাই প্রথমেই গায়ে এসে পড়ে মর্টারের গোলা। চোখের সামনে নেতাকে হারাতে দেখলো সহযোদ্ধারা। চোখে নোনা জল, অন্তরে প্রতিশোধের প্রত্যয়।

যুদ্ধ। প্রচণ্ড যুদ্ধ। মরবো, তবু পেছাবো না, দেশের মাটি ছাড়বো না। ছয় ঘণ্টা দীর্ঘ যুদ্ধের পর হানাদারদের পশ্চাদপসরণ। এক টুকরো মুক্ত-স্বাধীন মাটির স্বপ্ন দেখতেন নিজাম। তাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মোকামটিলায় তিন ওলীর মাজারের পাশে তাকে সমাহিত করেন সহযোদ্ধারা। এলাকার বর্তমান নাম নিজামনগর। আমাদের নিজামউদ্দীন বেসামরিক নাগরিক থেকে নয়জন বীর-উত্তমের একজন নিজাম। বীর উত্তম। বীরদের মাঝেও সে বীর। আমাদের গর্ব, আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের দিশারী। আমাদের গৌরবের অতীতের আরেক বীর। এমন দৃঢ়চেতা,অকুতভয় লক্ষ নিজামের রক্তে গাঁথা এদেশের ভিত, সাধ্য আছে টলাবে কেউ?





আগে প্রকাশিত : https://০৫৬৪৬১
Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved