ছবি : মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় উৎসব
নাটোরের লালপুরের নাম শুনেছেন? না শুনলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এখানেই রচিত হয়েছে মুক্তিকামী বাঙালি-সাঁওতালের এক অনন্য বীরত্বগাঁথা- নাম তার ‘ময়নার যুদ্ধ’
।বাঙালি নিধনের জন্য পাকিস্তানি মেজর রাজা আসলাম পাবনা (বৃহত্তর রাজশাহী) এসে পৌঁছালে প্রতিরোধের মুখে রাজশাহীর দিকে পশ্চাদপসারণ করতে বাধ্য হয়। স্থানীয় বাঙালি বাহিনী তখন অবরোধক স্থাপন করে এবং নাটোরের ধানাইদহে একটি সেতু ধ্বংস করে। আর স্বল্পদূরে গোপালপুরে স্টেশনকর্তা ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট দিয়ে স্টেশন গেটে তৈরি করেন আরেকটি অবরোধক।
মার্চের ৩০ তারিখে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ওয়ালি ময়না গ্রামের কাছে যাত্রাবিরতি নেয়ার কালে বাঙালি যোদ্ধাদের একটি দল তাদের আক্রমণ করে স্থানীয় সাঁওতালদের সাহায্য নিয়ে। ময়নার যুদ্ধ নামে পরিচিত এই সংঘর্ষে চল্লিশজন বাঙালি যোদ্ধা নিহত হন। যুদ্ধে পাকিস্তানিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও, হঠাৎ করে বেসামরিক লোকদের আক্রমণে তাদের মনোবলে ছেদ পড়ে।
রাতে পাকিস্তানিরা ছোট ছোট উপদলে বিভক্ত হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পাকিস্তানি মেজর রাজা আসলাম খান চুপিসারে পালানোর সময় স্থানীয় জনগণ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া ঈশ্বরদী বিমান বন্দরে যেন পাক সেনা অবতরণ করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় মুক্তিকামী জনতা মিলের বুলডোজারসহ অন্যান্য যানবাহনের সহায়তায় বিমান বন্দরের রানওয়ে ভেঙ্গে অকেজো করে দেন। রাতে পালানোর সময় কিছু সংখ্যক পাকিস্তানি আর্মি ধরা পরে। তখন তাদের স্থানীয় বাঙালি বাহিনীর নেতা ও উত্তরবঙ্গ চিনিকলের সাধারণ ব্যবস্থাপক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট আনোয়ারুল আজিম এর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত বিচারকার্যের পরে লালপুর এসএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
পরবর্তীতে আনোয়ারুল আজিমকে তাঁর চিনিকলের ২০০ জন বাঙালি কর্মীর সাথে ৫ মে পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে পাক বাহিনী। পুকুরের নাম হয় শহীদ সাগর। সে ঘটনার বিবরণ আরেকদিন ...
Post a Comment