আমার দেখা প্রথম মুক্তিযোদ্ধা ও একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প !

http://cninews24.com/wp-content/uploads/2012/08/freedom.jpg
গতকাল গতবছর সামারে আমি একটা পিকনিকে গিয়েছিলাম । সামারে এ দেশে বাঙ্গালি কমুনিউটিতে পিকনিক একটা বিরাট উৎসবের মত । খুব আয়োজন করে পিকনিক করা হয় । এখানে এলাকা ভিত্তিক পিকনিক হয় । প্রত্যেকে যার যার এলাকার পিকনিকে যায় । প্রত্যেকটা এলাকার একটা organaization আছে । তারা এই পিকনিকের আয়োজন করে থাকে । আমি যে পিকনিকে গিয়েছিলাম সেটা আমার এলাকার পিকনিক ছিল না,আমি গিয়েছিলাম একজনের মেহমান হয়ে । সেটা ছিল যশোহর জেলা কতৃক আয়োজিত ।

এই পিকনিকে আমার একজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে দেখা হয় । যিনি হলেন আমার দেখা প্রথম মুক্তিযোদ্ধা । প্রথম বললাম এ কারনে এর আগে আমি কোন মুক্তিযোদ্ধার সাথে এরকম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সরাসরি কথা বলিনি।যা ছিল তা সবই বই গল্প ইতিহাস আর টেলিভিশন থেকে জানাশোনা কিংবা চোখে দেখা । ছোটবেলা থেকে মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার একধরনের কৌতুহল কাজ করত । কিন্তু কোনদিনই কোন সুযোগ পাইনি কোন মুক্তিযোদ্ধার সাথে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলার । উনার সাথে আমার তেমন কথা হয়নি,সংক্ষিপ্ত করে উনি উনার কিছু কথা আমাকে বলেছেন আর কিছু ছবি দেখিয়েছেন। আমি উনার কথাগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।

উনার নাম খুরশিদ আনোয়ার বাবলু । উনি ছিলেন সেক্টর ৮ এর সর্ব কনিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা । মাত্র ১৪ বছর বয়েসে উনি যুদ্ধ করেছেন । উনার মা বোন উনাকে যুদ্ধ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন । কিন্তু উনি আবার মা বোনদের ফাঁকি দিয়ে যুদ্ধে চলে যান । ৭১ এর এপ্রিল মাসে উনাদের ক্যাম্প পাকিস্তানিরা ঘেরাও করে সবাইকে ধরে নিয়ে যায় । উনি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ক্যাম্পের পাশে একটা দু-তলা বাড়িতে আশ্রয় নেন । কিন্তু পাকিস্তানিরা উনাকে ঐখান থেকে ধরে ফেলে । তারপর উনাকে দু-তলা থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয় ।তখন উনার হাত পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা পান আর উনার সামনের কয়েকটা দাঁত ভেঙ্গে যায় । তারপর উনিসহ ক্যাম্পের সবাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে লাইন ধরিয়ে ব্রাশফায়ার করে সবাইকে মেরে ফেলে । ভাগ্যক্রমে উনি বেচেঁ যান । কারন ব্রাশফায়ারের আগে উনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন । আর ওরা ভেবেছিল সবাই মারা গেছে ।

এরপর ও উনি যুদ্ধ থেকে ফিরে আসেননি । উনি এরপর ভারতে চলে যান ট্রেনিংয়ে,দুই মাস ট্রেনিং শেষে আবার যুদ্ধে যোগ দেন । দেশ মুক্ত করে ফিরেন । স্বাধীনতার পর উনি কলেজে ভর্তি হন । ডিগ্রি
পাস করে বাংলাদেশ বিমানে চাকরি করেন । ১৯৮৪ এ উনি জাপানে চলে যান । ১৯৯১ এ উনি আবার দেশে ফিরে যান । দৈনিক রানা নামক একটি পুত্রিকায় কাজ শুরু করেন ।এটা একটা যশোহরের লোকাল একটা পত্রিকা । ১৯৯৭ এ দৈনিক রানার সম্পাদক সর্বহারা দলের বিপক্ষে লেখার কারনে ওদের হাতে খুন হন । তথন উনি ও ওদের আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন ।ওরা উনার বাড়িতেও আক্রমন চালিয়েছিল । এরপর ১৯৯৮ পলিটিকাল সেল্টারে স্বপরিবারে আমেরিকায় চলে আসেন । এরপর থেকে উনি এখানে আছেন ।

উনাকে আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম,আপনি কি মূল্যয়িত হয়েছেন,কিংবা একজন মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে কি কেউ কখনও মূল্যায়ন করেছে ।উত্তরে উনি সরাসরি বললেন কখনও কোথাও কেউ মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে মূল্যায়ন করেনি । মূল্যায়ন দূরে থাক,একটা সময়তো মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে পরিচয় ও দিতে পারতাম না ।কিছুটা দুঃখের সাথে আমাকে বললেন,আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম বলেই আজ তুমি এখানে আসতে পেরেছ । তারপর উনি কিছু উদহারন দিয়ে বোঝালেন দেশ স্বাধীন হওয়ায় কি লাভ হয়েছে । কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্হায় উনি খুব অখুশি খুব অসন্তুষ্ট।উনি খুব আপসোসের সাথে বলেন এর জন্যে উনারা যুদ্ধ করেননি । উনারা যুদ্ধ করেছিলেন একটা সুখী সুন্দর শান্তিময় দেশ গড়ার সপ্নে,যে সপ্ন আজও সত্যি হয়নি । উনি সব শেষে বলেন - খুব খারাপ লাগে যখন দেখি রাজাকারের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা লাগানো,যখন দেখি রাজাকাররা বাংলাদেশের মন্ত্রী ।    
Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved