জমির আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন

http://media.somewhereinblog.net/images/zicses_1282799359_1-bangladesh_04.jpg

(১)

হঠাৎ দরজায় টোকার শব্দ শুনে, ঘরের ভিতর থেকে কে.....?কে......?
জমির চাচা কি ঘরে আছনি, ঘরের বাহির থেকে বলল একজন।
জমির দরজা খুলে: তোরা এত্তরাতে, আমার কাছে !
সোহেল বলল চাচা আপনাকে কালকে থাকতে হবে।
জমির প্রশ্ন করার মতো সোহেলের দিকে তাকিয়ে রইল।
চাচা কালকে আমরা একটা অনুষ্টানের আয়োজন করেছি, অনুষ্ঠানে আমরা আমাদের ইউনিয়নের যত্ত মুক্তিযোদ্ধা আছে, সকলকে পুরষ্কার দেওয়া হবে।
জমির এবার ও কিছু বলল না শুধু চেয়ে থাকল সোহেলের দিকে।
সোহেল আবার বলল: আমরা যাই তাহলে, আপনি কিন্তু কালকে ৩.০০টা বাজে থাকবেন চাচা। বলে সোহেলেরা চলে গেল।
সোহেলেরা চলে যাবার পরও জমির দরজা ধরে অনেকক্ষন দাড়িয়ে রইল।

(২)

এতক্ষন কার সাথে কথা কইলা বলল জমিরের বউ।
জমির মুচকি হাসে (কারণ সে যে মুক্তিযোদ্ধা ছিল এখনো ও তার বউ বিশ্বাস করে না।)
কি হইল হাস ক্যান, কার সাথে কথা কইলা বললা না তো।
সোহেল, রুবেল আইছিলো তাগো লগে কথা কইলাম বলল জমির ।
জমিরের বউ অবাক হয়ে গিয়ে বলল, ওরা এত্তরাতে তোমার কাছে, কি মনে কইরা।
তুমি তো বিশ্বাসই কর না, আমি যে মুক্তিযোদ্ধা আছিলাম।
হু। মুক্তিযোদ্ধা না ছিলা
কাইলকা অনুষ্ঠান কইরা আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম তাগোরে পুরষ্কার দিবো সেইটাই কইতে আইছিলো ওরা।
হু । তোমারে তো হারা জীবনই পুরসকার দিলো বলল জমিরের বউ, (তবে মনে মনে হাসে)
ঠিক আছে কাইল-কাই, দেখবা নে।
আর হুনো সকাল সকাল আমারে একটু ডাইকা দিও,।
সকাল সকাল ক্যান, সকালে কি অনুষ্ঠান নাকি।
আরে না, যে ক্ষেতটা বর্গা লইছি, সেইটাই নিড়ি দিতে হইব। আচ্ছা আমার সাদা পাঞ্জাবীটা কি ধোয়া আছে নাকি।
হু। আছে বলল জমিরের বউ।

(৩)

এই হোন বাজারে যাইতে হইব, ঘরে কিচ্ছু নাই বলে জমিরের দিকে বাজারের ব্যাগটা বাড়িয়ে দেয় জমিরের বউ।
সবে মাত্র ক্ষেতের থেকে আইলাম, একটু জিরাতে দাও। আর হেইদিন না সবকিছু আনলাম, শেষ হইয়া গেছেগা।
হু। সবতো আমি আমার বাপের বাড়ি পাঠাইয়া দেই।
জমির আর কিছু বলে না- ব্যাগটা হাতে নিয়ে সে বাজারের দিকে চলে যায়, কথা বলতে গেলেই ঝগড়া বেধে যাবে।
জমির তার বউকে খুবই ভালবাসে-।জমিলা যে কিভাবে সংসারটা টিকিয়ে রেখেছে তা একমাত্র আল্লাহই জানে।
জমির নিজেও মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায়।

(৪)

কইগো হুনস আমার পাঞ্জাবীটা কি একটু ইসথারী কইরা দিবা।
ঘরে কি দুই-চারটা ইসথারী আইনা থুইছনি, যহন খুশি ইসথারী করা যাইব,
না –মানে কইছিলাম কি পাশের বাড়ির জাবের ভাইয়ের বউর কাছ থেকে যদি...........
জমিরের বউ ইস্ত্রী এনে আগেই পাঞ্জাবী ইস্ত্রী করে রেখেছিল।
এই লও তোমার পাঞ্জাবী: তারাতারি পইড়া অনুষ্ঠানে যাও, অনুষ্ঠান তো শেষ হইয়া গেলো গা।
জমির পাঞ্জাবী পড়ে অনুষ্ঠানের দিকে রওনা দিল। জমির কে যতদূর দেখা যায় জমিরের বউ ততক্ষন সেইদিকে তাকিয়ে রইল।

(৫)

চারদিকে অনেক লোকের সমাগম, হৈচৈ আর হৈচৈ। জমিরের সাথে অনেক পুরাণো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো। অনেক কথা হলো। কথা যেন শেষ হতে চায় না।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা চেয়ার রাখা আছে। জমির সবার শেষের সারির একটা চেয়ারে বসল।
মাইকে ঘোষনার মাধ্যমে অতিথীদের একে একে মঞ্চে এসে বসার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
আজকের প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করবেন আমাদের সকলের মধ্যমনি, স্বনামধন্য শিল্পপতি, শিক্ষানুরাগী বিপদের বন্ধু আলহাজ্ব মোঃ পাটোয়ারী সাহেব।

ঘোষনাটা শোনার পর জমিরের চোখ দুটা জাপসা হয়ে গেল, মাথায় ঝিম ঝিম শুরু হয়ে গেল। যেকোন সময় বমি করে দিতে পারে। শেষ বারের মতো সে মঞ্চে তাকালো দেখলো মাঝের চেয়ারটায় পাটোয়ারী বসে আছে।
তার কাছ থেকে পুরষ্কার নিতে হবে................]
পুরষ্কার না নিয়েই,---জমির হাতের তালু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অনুষ্ঠান থেকে চলে যাচ্ছে ।    
Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved