আজ লাখাইর কৃষ্ণপুর গণ্যহত্যা দিবস

http://bangladesh-i.com/uploads/article/635.jpg
আজ ১৮ সেপ্টেম্বর। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাক হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের ১২৭জন নারী-পুরুষকে। এছাড়া আশপাশের এলাকাগুলোতে হামলা চালিয়ে আরো শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতা লাভের ৪১ বছরেও এলাকাটিকে বধ্যভূমি হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা পায়নি কোন প্রকার সম্মান। অনাহারে-অর্ধাহারে কাঠে তাদের জীবন।
কৃষ্ণপুর ও চন্ডিপুর লাখাই উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত ২টি গ্রাম। এসব গ্রাম অনেকটাই দূর্গম হওয়ায় এখনো কোন মানুষ সেখানে খুব একটা যায় না। ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা কৃষ্ণপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে জ্বালিয়ে দেয় হিন্দুদের সব ঘর-বাড়ি। ১২৭ জন নর-নারীকে লাইনে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। গুলি খাওয়ার পর অলৌকিকভাব
ে বেঁচে যান ৩ জন। এখনো তারা পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পাক বাহিনীর হামলার সময় প্রাণ বাচাঁতে কয়েকশ নারী-পুরুষ কয়েকটি পুকুরের কচুরিপানার নিচে ডুবে
থেকে আত্মরা করেছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই মারা গেলেও যারা বেঁচে আছেন তারা জানান- সেদিনকার সেই নৃসংশ হত্যার কাহিনী।
বেঁচে থাকা আহত প্রমোদ রায় জানান, স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও কোন ধরনের ভাতা কিংবা সাহায্য পায়নি। তিনি এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ঘটনার প্রত্যদর্শী নৃপেন রায় (৬৫) বলেন, যুদ্ধের পর নিহত ও আহতদের তালিকা কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধা সংসদসহ সকল স্থানে লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধা নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা বারবার এসব ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছেন। এমনকি প্রতি বছরে ১৮ সেপ্টেম্বরের আগে বিভিন্ন টেলিভিশন, জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকগন আসেন। আমাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, অভাব-অভিযোগ লিখেন ও ছবি নেন। কিন্তু এতো বছরেও এগুলোর কোন কার্যকারিতা হয়নি। ফলে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে শুধুই চাপা ােভ বিরাজ করছে সরকার ও সংশিষ্ট বিভাগের উপর। গুলিবিদ্ধ মন্টু রায় (৮০) বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর পাক বাহিনীর গুলিতে আমার বাম হাত কনুই পর্যন্ত উড়ে যায়। এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পাড়ছি না। এমনকি নিজের মেয়েটিকেও বিয়ে দিতে পাড়ছি না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধের পর তিগ্রস্থদের ২ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। এর পর আর কোন সরকার আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। তিনি দুঃখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৌকায় আজও ভোট দিয়ে আসছি। এখন আওয়ামীলীগ মতায়। কিন্তু কোন ধরনের সহযোগিতা পাইনি।
ওই দিন কৃষ্ণপুরের পার্শ্ববর্তী চন্ডিপুর গ্রামে হানাদারদের হামলায় সকল পুরুষ নিহত হওয়ায় পর থেকে সেখানে অদ্যাবধি পর্যন্ত কোন লোকালয় গড়ে উঠেনি। বেঁচে যাওয়া নারীরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের এতো বছরেও এসব স্থানগুলোকে বধ্যভূমি ঘোষনা না করায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ােভ বিরাজ করছে। তবে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জানান এডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান জানান, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের একটি পরিদর্শক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সরকার এসব স্থানগুলোকে বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে এবং বেঁচে যাওয়া মানুষদের পূনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে ১৮ সেপ্টেম্বরের গণহত্যার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া হরিদাস বাদি হয়ে আওয়ামীলীগ নেতা লিয়াকত আলীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি আর্ন্তজাতিক আদালতের নির্দেশে ওই আদালতের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনোয়ারা খাতুনের তদন্তাধীন রয়েছে।
Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved