মা, মা, মা : একজন জননীর গল্প

হাবিলদার জয়নাল, চাকরী করতেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ে, অধীনে আছে ছোটখাট এক জনযোদ্ধার দল। এই দলের কেউ ছাত্র, কেউ মজুর, কেউ বা গ্রামের কৃষক। সবার পরিচয় জানেন না জয়নাল, জানার চেষ্টাও করেন না, সময়ও নেই। তার অধীনেই বেশ কিছুদিন আগে এক অপারেশানে মারা যায় এক ছেলে, নাম তালেম।

কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ক্যাম্পে হাজির হয় এক বুড়ি। জিজ্ঞেস 
করে,
" বাবাগো, মোর তালেমরে তোমরা চেনো? ওই যে ছোটখাট পুলাটা। তোমাগো এহানেই শুনি থাকে। তালেমের বাপে খুব রাগী মানুষ, তাই তালেম পলাইয়া আইছে যুদ্ধে। কোন কাপড় আর ট্যাকা পয়সা নিয়া আইতে পারে নাই। এই অল্প ট্যাকাগুলান আনলাম, তালেমরে দিও। সাথে এই নতুন লুঙ্গিখানও। আর তোমরা যুদ্ধ করো, অনেক শক্তির দরকার, তাই তোমগো লাইগা এই মুড়িগুলান ভাইজা আনলাম।

কী জবাব দেবেন জয়নাল? বুড়ির শেষ বয়সের সান্তনা তালেম। একটি মা কত কষ্ট করে একজন সন্তান জন্ম দেন, কত মমতায় তাকে বড় করেন, খাইয়ে দেন নিজ হাতে, তাকে কীভাবে দেওয়া যায় নিজ সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ? এই বয়সে এই বৃদ্ধা কি পারবে সেই ধকল সইতে?

পারলেন না জয়নাল। কপটতার আশ্রয় নিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয়টি করে বৃদ্ধার হাত থেকে নিলেন সেই উপহার। মুখে কিছু না বললেও, অভিব্যক্তিতে ফুটিয়ে তুললেন জিনিসটি নেওয়া মানেই বেঁচে আছে, সাথে তার বৃদ্ধার ছেলে। সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরে গেলেন তিনি। কিন্তু নাহ, তালেম ফিরে যায়নি কখনো তার মায়ের কোলে, শুয়ে আছে লাখো শহীদের এই বাংলার কোন এক অজানা প্রান্তরে।

'কত মাতা দিল হৃদয় উপারী
কত বোন দিল সেবা
সহস্র বীরের রক্তস্রোত
লিখিয়া রাখিল কেবা?

আগে প্রকাশিত:  https://www.facebook.com/Muktijuddhergolpo 

Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved