বাঙ্গালির যুদ্ধকৌশল - শুকনো মরিচের ঝাল



যুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারের ইতিহাস বেশ পুরনো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানরা যখন বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছিল, সেই ভয়াবহতায় তখন আঁতকে উঠেছিল সারাবিশ্ব। এরপর থেকেই কম-বেশী বিশ্বের সকল সুপ্রশিক্ষিত এবং বিবেকবান(!) দেশের সেনাবাহিনীই এই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে আসছে নিয়মিত। পাকবাহিনী যখন এদেশের মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন আমাদের ছিল না সুপ্রশ
িক্ষিত কোন সৈন্যদল বা ভারী কোন অস্ত্রের বিলাসিতা। কিন্তু যথারীতি আমাদের ছিল অমোঘ দেশপ্রেম এবং ক্ষুরধার বুদ্ধি, যা প্রয়োগে রণাঙ্গনে আমরা কার্পণ্য করিনি কখনোই।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল ২৯ শে মার্চ ১৯৭১ প্রতিরোধের প্রথম দিকে। আমাদের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আখাউড়াতে অবস্থিত ইপিআর কোম্পানি সদর দপ্তর আক্রমণ করে বসে বিদ্রোহরত নায়েব সুবেদার গোলাম আম্বিয়ার বাহিনী। শুরু হয় তীব্র যুদ্ধ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকতে না পারে রণভঙ্গ দেয় সদর-দপ্তরে অবস্থিত অবাঙ্গালি ইপিআররা। কিছু পালিয়ে আত্মসমর্পণ করে বিএসএফের কাছে, আর কিছু পাকিস্তানী ইপিআর একটি দলে রওনা হয় কুমিল্লা সেনানিবাসের দিকে। কিন্তু মাঝে বাদ সাধল নিরস্ত্র জনতা। গ্রামের পুরুষরা দা-কুড়াল এবং বউ-ঝিরা ঝাঁটা নিয়ে ঘেরাও দেয় সেই পুরো পাকিস্তানী দলকে। উপায়ান্তর না দেখে পাকিস্তানী দল আশ্রয় নেয় মসজিদে। সেখান থেকে গুলী চালাতে থাকে নিরস্ত্র গ্রামবাসীর উপর এবং অপেক্ষা করতে থাকে সুযোগের।

কিন্তু গ্রামবাসী কি এর এত অল্পতেই দমে? রাতের অন্ধকারে মসজিদের প্রবেশ পথে কড়া পাহারা বসিয়ে একদল লোক পাশের গাছ বেয়ে উঠে গেল মসজিদের ছাদে। তারপর সেই ছাদ ফুটো করে তড়িঘড়ি করে ভেতরে ফেলা হল কয়েক বস্তা শুকনো মরিচের গুঁড়ো এবং সাথে সাথেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল সেই মরিচের বস্তাগুলোতে। ব্যাস, এতেই হয়ে গেল আমাদের নিজেদের আবিষ্কৃত রাসায়নিক অস্ত্র। অল্প ক্ষণ পরেই চোখ ডলাডলি এবং কাশতে কাশতে বেরিয়ে আত্মসমর্পণ করলো পাকিস্তানীদের পুরো দল। এভাবে বিনা অস্ত্রে শুধু বুদ্ধিরে জোড়েই একটি খণ্ড-যুদ্ধে জয় হয় আমাদের। একাত্তরের রণাঙ্গনে আমাদের নিজস্ব কৌশল প্রয়োগের এমন উদাহরণ রয়েছে শত-সহস্ত্র, যার দ্বারা পাকিস্তানীরা হয়েছে ক্রমাগত বিপর্যস্ত এবং এভাবেই ধীরে ধীরে চিড় ধরে তাদের আত্মবিশ্বাসে, যা আমাদের সাহায্য করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের।




Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved