ছবি : মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ধৃত কয়েকটা রাজাকার
৭৭। তবে তাঁরা শীর্ষস্থানীয় দুইজন রাজাকারকে ধরতে পারেননি। এরা হচ্ছে ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলা প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান এবং রাজাকার কমান্ডার শেখ আনসার আলী যে পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ঘাঁটি থেকে উদ্ধার করা কাগজপত্রে দেখা যায়, ওই রাজাকার ক্যাম্পের মাধ্যমে এক হাজার ছয়শত এক জনকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে হত্যা করার জন্য কপিলমুনি ও এর আশপাশের এলাকার আরো এক হাজার জনের নামের একটি তালিকা পাওয়া যায় ঘাঁটিতে। রাজাকারদের গ্রেফতার ও ঘাঁটি দখলের খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের মানুষরা এসে ভিড় করে কপিলমুনিতে। চারদিক থেকে এলাকাবাসী পিঁপড়ের সারির মতো এসে স্কুলমাঠে জড়ো হয়। তাঁরা তাঁদের হাতে রাজাকারদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে দাবি জানাতে থাকেন। কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু ঘোষণা করেন, গ্রেপ্তার হওয়া রাজাকারদের বন্দি অবস্থায় মিত্রবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এলাকাবাসী। তাঁদের প্রত্যেকেই যুদ্ধে স্বজনদের হারিয়েছেন। চোখের সামনে খুনিদের দেখে কোনো অবস্থাতেই তাঁরা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে দেননি। অবশেষে জনতার চাপের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেপ্তারকৃত রাজাকারদের বিচার কপিলমুনিতেই করার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক করা হয়, আদালত বসিয়ে রাজাকারদের বিচার করা হবে, প্রত্যেক রাজাকারের বিরুদ্ধে আলাদা ভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ চাওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলেই শুধু সেই রাজাকারকে দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হবে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল হত্যা, অগি্নসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ প্রভৃতির মতো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা অবধি এই বিচার কাজ চলে। সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাওয়ায় বিচারে ধৃত রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের রায় ঘোষণা করা হয়। জনতার দাবির মুখে তাৎক্ষণিক ফায়ারিং স্কোয়াডে এই দণ্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা কাইয়ুম বলেন, ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকারদের সাজা কার্যকর করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত রাজাকারদের মধ্যে সাধারণ জনতা বেছে বেছে ১১ রাজাকারকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে। এই ১১ রাজাকার অতিনির্মম অত্যাচারী ছিল। জনতা এদেরকে গুলি করে হত্যা করার পরিবর্তে কষ্ট দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার দাবি তোলে এবং এক পর্যায়ে নিজেরাই এদের ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যেভাবে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে গোটা শরীর চিরে তাতে লবণ পুরে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল, ঠিক তেমনি এসব রাজাকারকেও সারা শরীর ব্লেড দিয়ে কেটে তাতে লবণ পুরে মাঠে ফেলে রাখা হয়। এই রাজাকাররা এতোই নৃশংস ছিল যে অত্যাচার করে হত্যা নিশ্চিত করেও মানুষের ঘৃণা, ক্ষোভের রেশ কাটেনি। মানুষ ওইসব প্রায় মৃত শরীরের ওপরেও কিল-লাথি-ঘুষি দিয়ে ক্ষোভ প্রশমন করে।
মূল লেখা : http://bit.ly/NjAGLg
Post a Comment