আমাদের গর্ব, আমাদের হতাশা



প্রথম ছবিটি গর্বের, অনুপ্রেরণার। তিন জন মুক্তিযোদ্ধা, দেশ-মাতৃকার টানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অনিশ্চয়তার এক যুদ্ধে, অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের। ভারতের শিলং এ কোন এক ক্লান্ত অবসন্ন বিকেলে ট্রেনিং এর সামান্য বিরতিতে হয়তো ছবিটি তোলা। আমাদের ছেলে, আমাদের বীর, আমাদের গর্ব।

কিন্তু পাশের ছবিটি? একটি সরকারি পরিপত্রের ছবি,যা বহন করে বেদনার ছাপ। স্মরণ করিয়ে দেয় এক বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস। জারী করা হয়েছিল সুনামগঞ্জের স্থানীয় শান্তি কমিটির কার্যালয় থেকে।

প্রথম ছবির একজন মুক্তিযোদ্ধা, সুনামগঞ্জের প্রিয় এডভোকেট বজলুল মজিদ খসরু, একাত্তরে যিনি ছিলেন টগবগে তরুণ। তার যুদ্ধে যোগদানের খবর পেয়ে স্থানীয় শান্তি কমিটির প্রধান ফারুক চৌধুরী তার বাবাকে নির্দেশ দেন সাত দিনের মধ্যে ছেলেকে মার্শাল ল্য অথরিটির সামনে হাজির করতে। হাজির না করলে কী হবে তা লেখা নেয়, তবে ইঙ্গিত আছে। অনুহ্য আছে অত্যাচার এবং বর্বরতার শীতল হুমকি। একটি , দু'টি, শ'টি, হাজারটি, এভাবে লাখো চিঠি বেরিয়েছিল পাকিস্তানী সেনাদের কাছ থেকে। আর পাকিস্তানীদের হয়ে এই কাজে উৎসাহ বেশী দেখিয়েছিলেন গোলাম আযম, নিজামীর প্রতিষ্ঠা করা "শান্তি কমিটি"।



সেই যোদ্ধা খসরু দেশ স্বাধীন করে ফিরে এসেছিলেন মায়ের বুকে। আর শান্তি বাহিনীর প্রধান ফারুক চৌধুরী পালিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ থেকে। ২০০৭ সালে মারা যান ঢাকাতেই। একাত্তরের পাপের শাস্তি পেতে হয় নি তাকে, আমাদের ব্যর্থ করে একজন নিরপরাধ মানুষের মত স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছে তার। আমাদের আইনে মৃত লোকের বিচারের এখতিয়ার নেই, নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পূর্বপুরুষ হত্যার বিচার চাইতো ঠিকই। তাই সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।

বেঁচে আছে বাঙ্গালী হত্যার মূল ক্রীয়ানকদের অন্যতম গোলাম আযম, বেঁচে আছে নিজামী, বেঁচে আছে মুজাহিদ-সাঈদী-সাকা গং। এখনই সময় তাদের ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড় করাবার, "এদেশে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি" এমন মন্তব্যের মাধ্যমে ইতিহাস অবমাননার জবাব দেবার, পাকিতোষণকারী এসব গোখরের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেবার। বিচার হবে, হতেই হবে।

কৃতজ্ঞতাঃ মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন [A Page totally based on liberation war'71]
Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved