আঙুলের ডগায় রক্ত মেখে শাদা চুনকাম করা দেওয়ালে লিখতে লিখতে শাহেদের হাত কাঁপে।
মায়ের কথা মনে পড়ে ওর...
কাল শেষরাতের অপারেশেনের পর ওরা সাতজন ধরা পড়ে, চারজন শহীদ হয়: বাশার ভাই, সমরেশ, অবদুল আজীজ ভাই ও সুনীলদা। বন্দিদের চোখ বেঁধে জীপে তোলে, তারপর এই পরিত্যক্ত স্কুলঘরে নিয়ে আসে। শাহেদের পায়ে গুলি বিঁধেছিল, তখন থেকে খুব ব্লিডিং হচ্ছে। তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে, দ্রুত নিভে আসছে চোখের আলো।
সকাল থেকে একে একে অতীশ নিতাই লালন রবি নজরুল ও হাসন কে নিয়ে গেছে পাশের ঘরে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ওরা আর ফেরেনি। ফিরবেও না ...কেবল ওদের সৃষ্টি চিরকাল বেঁচে রইবে এই বাংলায় ...
... এরপর শাহেদের পালা।
ও লিখতে থাকে।
লিখতে লিখতে প্রবল রক্তক্ষরণের ফলে শাহেদের চোখের আলো নিভে যায়।
দীর্ঘকায় এক পাঞ্জাবি খান সেনা ঘরে ঢোকে।
মুক্তি যে আর বেঁচে নেই সৈন্যটি বুঝতে পারে। সামান্য হতাশা বোধ করে সৈন্যটি। এদের ধরে টর্চার করলে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। আহা, এই মুক্তি মরে গেল। আফসোস। হঠাৎই পাঞ্জাবি খান সেনার চোখে পড়ে ...মুক্তির মাথার কাছে শাদা চুনকাম করা দেওয়াল রক্তের রঙে কী সব লেখা। পাঞ্জাবি সৈন্যটি বাংলা পড়তে পারলে হয়ত পড়তে পারত ...
আবার আসিব ফিরে ধানসিড়ির তীরে - এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় , হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঠাঁলছায়ায়;
হয়তো বা হাঁস হব , কিশোরীর, ঘুঙুর রহিবে লাল পায়,
সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধ ভরা জলে ভেসে-ভেসে;
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়;
অপরিচিত ভাষায় লেখার দিকে তাকিয়ে পাঞ্জাবি খান সেনাটি খানিক বিরক্ত বোধ করে।
তারপর লাশটি স্কুল ঘরের পিঠনের ডোবায় ফেলে দেবে বলে উবু হয়ে মৃত মুক্তির পা ধরে টানতে থাকে ...
মূল লেখা : http://www.somewhereinblog.net/blog/benqt60/29201669
Post a Comment