এক বীভৎস যৌন নির্যাতনের কথা

কোতায়ালী থানার ভেতরে হলেও মোহনপুর গ্রাম দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় বার মাইল দক্ষিন-পূর্বে। জয়নাল আবেদীন এই গ্রামেরই একজন খেটে খাওয়া গেরস্থ। স্ত্রী, কিশোরী মেয়ে আর শিশুপুত্র নিয়ে তার সংসার। আর দশজন শ্রমজীবি মানুষের মতই, 'সুখে-দুঃখে লেপটে থাকা বছর মাসের বছর জয়নালের।

জয়নালরা রাজনীতির সুফলের অংশীদার হয় কদাচিৎ,কিন্তু রাজনীতির ভোগান্তির সবটুকুই ভোগে। একাত্তরেও এর ব্যতিক্রম রইলো না। ছোট্ট ভুবন জয়নালের। এক প্রস্থ ভিটার উপর এক রত্তির এক ঘর। তথাকথিত ইসলামী উম্মাহর ধ্বজাধারী পাকিস্তান নামক দেশের অখন্ডতা রক্ষায় মাথায় টুপি আর জানুর নিচে নামানো আলখেল্লায় আবৃত ইসলামের খেদমতগাররা (?) পাকিস্তানী সেনাদের গ্রামে গ্রামে নিয়ে যায়। ...
...

এক সকালে এই সেবাদাসরা পাকিস্তানী বাহিনী নিয়ে এল মোহনপুরে। জয়নাল এর কিছুই জানতো না। সব লন্ড-ভন্ড হয়ে গেল। দু'কোঠার ঘরের এক কোঠায় ধর্ষন করা হলো জয়নালের স্ত্রীকে; অপর কোঠায় কিশোরী কন্যাকে। কিশোরী মেয়ে ভালভাবেই জানতো পাশের ঘরে তার স্নেহময়ী মায়ের অসহায় অবস্থা এবং তার মাও জানতো অপর ঘরে তার আদরের কণ্যার করুণ পরিণতি। কারো কাছে অভিযোগ করলো না মেয়ে,অনুযোগও করলো না কোন। গ্লানি ঢাকলো সে গলায় দড়ি দিয়ে। লজ্জাটুকু রেখে গেল আমাদের জন্যে।

============

হায় নিয়তি। কালের আবর্তে পাকিস্তানের সেই সেবাদসদের গাড়ীতে ওঠে মন্ত্রীত্বের পতাকা, আর জয়নালের মত চরম মূল্য দেওয়া মানুষদের ছুঁড়ে ফেলা হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।

সূত্রঃ জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা (মেজর কামরুল ইসলাম ভুঁইয়া)
ছবিঃ কিশোর পারে
Share this post :

Post a Comment

 
Support : Copyright © 2012. মুক্তিযুদ্ধের গল্প - All Rights Reserved